শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ: উচ্চশিক্ষার সুযোগ, প্রকারভেদ ও আবেদন গাইড

কেন শিক্ষাবৃত্তি প্রয়োজন?

বাংলাদেশে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হন। এই আর্থিক সীমাবদ্ধতা ব্যক্তিগত স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা। এছাড়াও, এটি দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ এই বাধা দূর করে শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। এটি কেবল আর্থিক সহায়তা নয়; বরং এটি শিক্ষার্থীদের মেধার স্বীকৃতি দেয়। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক। একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তিও স্থাপন করে। ফলস্বরূপ, শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ সামাজিক সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও শিক্ষার সুযোগ পায়। এভাবে, এটি দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় অগ্রগতিতে অবদান রাখে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

শিক্ষাবৃত্তির প্রকারভেদ: আপনার জন্য কোনটি উপযুক্ত?

শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ মূলত চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। এটি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদা ও লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি। সুতরাং, এই বিভাজন শিক্ষার্থীদের তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বৃত্তি খুঁজে পেতে সহায়তা করে।

সরকারি শিক্ষাবৃত্তি

বাংলাদেশ সরকার এবং এর অধীনস্থ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে। এগুলো দেশের অভ্যন্তরে শিক্ষা প্রসারে সহায়তা করে। বিশেষ করে, এই বৃত্তিগুলো মেধাবী ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক।

  • প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (PMEAT): এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সরকারি শিক্ষাবৃত্তি প্রদানকারী সংস্থা। এই ট্রাস্ট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্তরে আর্থিক সহায়তা দেয়।
    • PMEAT এর বিভিন্ন কর্মসূচি:
      • সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি: ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই কর্মসূচি পরিচালিত হয়। উপবৃত্তির অর্থ সরাসরি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এটি ইএফটি বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়। একইভাবে, টিউশন ফি অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয় ।  
      • ই-স্টাইপেন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম: স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। এখানেও, উপবৃত্তির অর্থ ইএফটি/মোবাইল ব্যাংকিং এবং টিউশন ফি অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয় ।  
      • ভর্তি সহায়তা: ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৮,০০০ টাকা এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে ১০,০০০ টাকা হারে এই সহায়তা প্রদান করা হয় ।  
      • চিকিৎসা অনুদান: দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। যেমন, এর পরিমাণ ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে ।  
      • এম.ফিল/পিএইচডি ফেলোশিপ: উচ্চশিক্ষায় গবেষণার জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ফেলোশিপ ও বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এম.ফিল. কোর্সে মাসিক ১০,০০০ টাকা দেওয়া হয়। এটি ২ বছর মেয়াদী। অন্যদিকে, পিএইচ.ডি. কোর্সে মাসিক ১৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়। এটি ৩ বছর মেয়াদী ।  
    • আবেদন প্রক্রিয়া ও সময়সীমা (PMEAT): স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। এর মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (ডিগ্রি ও ফাজিল ১ম বর্ষ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অন্তর্ভুক্ত। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়েছিল। এটি ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১৫ মে পর্যন্ত চলে ।   উল্লেখ্য, আবেদন করার জন্য ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয় । বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন:   প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ওয়েবসাইট ।  
  • শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট বৃত্তি: এই ট্রাস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। এটি শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট বৃত্তি পরীক্ষা-২০২৪ এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে থাকে ।   মূলত, এটি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য। আরও তথ্যের জন্য দেখুন: শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের ওয়েবসাইট ।  
  • বিদেশি সরকার প্রদত্ত শিক্ষাবৃত্তি: বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশি সরকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ দেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এই বৃত্তিগুলোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ।   উদাহরণস্বরূপ, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ এর জন্য হলো:

বেসরকারি ও এনজিও শিক্ষাবৃত্তি

বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক, ফাউন্ডেশন এবং এনজিও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে। তারা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বা শিক্ষাস্তরের শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে। সাধারণত, এই বৃত্তিগুলো সরকারি বৃত্তির পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।

  • আরডিআরএস বাংলাদেশ (RDRS Bangladesh): এটি একটি জাতীয় মানবিক ও উন্নয়ন সংস্থা। এটি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করে।
    • আরডিআরএস বাংলাদেশ: পরিচিতি ও উদ্দেশ্য: রংপুর বিভাগের নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সংকট দূর করা এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য। এটি একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে অবদান রাখে । তহবিল প্রাক্তন বিদেশী কর্মী সমিতির অনুদান, পিকেএসএফ-এর সহায়তা এবং ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির উদ্বৃত্ত অংশ থেকে সংগ্রহ করা হয় ।  
    • যোগ্যতা ও অগ্রাধিকার: পারিবারিক মাসিক আয় ১০,০০০ টাকার নিচে হতে হবে। এসএসসি/এইচএসসিতে কমপক্ষে জিপিএ-৪ থাকতে হবে। নারীদের জন্য ৩.৫ হলেও চলে। শিক্ষার্থীকে রংপুর বিভাগের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। তাকে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণকালীন ছাত্র হতে হবে । অতিদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী, পিছিয়ে পড়া মানুষ এবং সংস্থার ৩য় গ্রেডের নিচের ও নন-স্টাফ কর্মীদের ছেলেমেয়েদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ৬০% কোটা সংরক্ষিত থাকে ।   তবে, প্রয়োজনীয়সংখ্যক যোগ্য নারী শিক্ষার্থী না পাওয়া গেলে, পুরুষ শিক্ষার্থীদেরকেও এই বৃত্তি দেওয়া যাবে । মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, নার্সিং, কৃষি ইত্যাদি কোর্সে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পান ।  
    • আর্থিক সুবিধা ও মেয়াদ: উচ্চশিক্ষার জন্য (মেডিকেল/ইঞ্জিনিয়ারিং/বিশ্ববিদ্যালয়) বই কেনার জন্য এককালীন ১০,০০০ টাকা এবং মাসিক ৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়। ডিপ্লোমা/অন্যান্য কোর্সের জন্য বই কেনার জন্য এককালীন ৬,০০০ টাকা এবং মাসিক ৩,০০০ টাকা দেওয়া হয় । বৃত্তি বার্ষিক ও নবায়নযোগ্য। এটি ত্রৈমাসিকভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় ।  
    • আবেদন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া: আরডিআরএস প্রদত্ত নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হয়। এই ফর্ম তাদের ওয়েবসাইট এবং জেলা/উপজেলা/শাখা অফিসগুলোতে পাওয়া যায়। আবেদনপত্রের সাথে ছবি, এসএসসি/এইচএসসি সার্টিফিকেট, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হয় । বৃত্তি একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া।   সুতরাং, এর বাছাই প্রক্রিয়া বৃত্তি ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি) দ্বারা সম্পন্ন হয়। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই, সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত, র‍্যাঙ্কিং এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা হয় । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   আরডিআরএস বাংলাদেশের ওয়েবসাইট ।  
  • ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি: দেশের অন্যতম বেসরকারি ব্যাংক ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক পিএলসি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ প্রদান করে ।
    • যোগ্যতা: সিটি করপোরেশন ও জেলা শহরের অন্তর্গত স্কুলের শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ থাকতে হবে। গ্রামীণ বা অনগ্রসর অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জিপিএ–৪.৮৩ থাকতে হবে ।   তবে, অন্য কোনো সরকারি বৃত্তি না পেলে এই বৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে না ।  
    • আর্থিক সুবিধা: উচ্চমাধ্যমিক বা এইচএসসি পড়াকালীন প্রতি মাসে ২,৫০০ টাকা করে ২ বছরে মোট ৬০,০০০ টাকা। এছাড়া, প্রতিবছর পাঠ্য উপকরণ কিনতে ২,৫০০ টাকা ও পোশাকের জন্য ১,০০০ টাকা অনুদান মেলে । স্নাতক পর্যায়ে মাসিক ৩,০০০ টাকা দেওয়া হয়। বার্ষিক ৫,০০০ টাকা (পাঠ্য উপকরণ) ও ১,০০০ টাকা (পোশাক) অনুদানও দেওয়া হয় ।  
    • আবেদন প্রক্রিয়া: আবেদন অনলাইনে করতে হয় । ২০২৫ সালের জন্য ৬ আগস্ট পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ আছে । আবেদনের জন্য ভিজিট করুন:   ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি পোর্টাল ।  
  • আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম শিক্ষাবৃত্তি: এটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এটি যাকাত ফান্ড এবং অন্যান্য অনুদান থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে অসচ্ছল, সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মাসিক বৃত্তি প্রদান করে ।   ফলস্বরূপ, এই প্রতিষ্ঠানটি দরিদ্র, এতিম ও সুবিধা বঞ্চিত ছেলেমেয়েদের বিনা বেতনে বা স্বল্প বেতনে পড়ার সুযোগ দেয় । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের ওয়েবসাইট ।  
  • সিজেডএম জিনিয়াস বৃত্তি কর্মসূচি (CZM Genius Scholarship Program): যাকাত তহবিল ব্যবহার করে অসচ্ছল, সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মাসিক বৃত্তি এবং সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রদান করা হয় ।
    • যোগ্যতা: ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন । বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ্য। কিছু বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ এর বাইরে।   উল্লেখ্য, শুধুমাত্র যাদের পরিবার শিক্ষার খরচ বহন করতে অক্ষম, তারাই আবেদন করতে পারবেন ।  
    • অযোগ্যতা: যারা যাকাত তহবিলের জন্য যোগ্য নন বা যাদের পরিবার যাকাত গ্রহণ করতে সম্মত নয়, তারা আবেদন করতে পারবেন না ।   তাছাড়া, নির্দিষ্ট ফরমের বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন না। ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের আগে বা পরের সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাও অযোগ্য। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা আবেদন করার যোগ্য নন । আবেদনের জন্য ভিজিট করুন:   সিজেডএম জিনিয়াস বৃত্তি কর্মসূচির ওয়েবসাইট ।  
  • ব্র্যাক শিক্ষাবৃত্তি: ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির ‘মেধাবিকাশ উদ্যোগ-২’ এর মাধ্যমে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে ।
    • যোগ্যতা: আবেদনকারী শিক্ষার্থীর পারিবারিক মাসিক আয় ২০ হাজার টাকার কম হতে হবে । ব্র্যাকের যেকোনো কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত দরিদ্র সদস্যদের সন্তানদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় । শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং উন্নয়নের বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।   এক্ষেত্রে, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের শর্ত শিথিলযোগ্য ।  
    • আর্থিক সুবিধা: নির্বাচিত মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা এককালীন ১৫ হাজার ও মাসিক ৭,৫০০ টাকা পান। অন্যদিকে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এককালীন ১০ হাজার ও মাসিক ৭,০০০ টাকা বৃত্তি পাবেন ।  
    • আবেদন প্রক্রিয়া: নিজেকে কেন বৃত্তিটি পাওয়ার যোগ্য মনে করেন, সে বিষয়ে ২৫০ শব্দের একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হয়। এটি আবেদনপত্র হিসেবে বিবেচিত হয় । আবেদনপত্রের সঙ্গে পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ভর্তির সময় জমাকৃত অর্থের রসিদের ফটোকপি, জন্মনিবন্ধন/জাতীয় পরিচয়পত্র, এসএসসি ও এইচএসসির ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল, অভিভাবকের পেশা, আয়কর সনদ, আয়ের সনদ, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এবং যোগাযোগের জন্য মুঠোফোন নম্বর উল্লেখ করতে হয় । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্কলারশিপ ও আর্থিক সহায়তা পাতা ।  
  • আকিজ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবৃত্তি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আকিজ-মনোয়ারা শিক্ষা সহায়তা বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদন ফরম রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে সংগ্রহ করা যায়। বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষর ও সীলসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে হয় । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   আকিজ ফাউন্ডেশনের স্কলারশিপ পাতা ।  
  • গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি: গ্রামীণ ব্যাংকও এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান করে। এর ফলে, শিক্ষার্থীরা ১৬,২০০ টাকা পর্যন্ত বৃত্তি পেতে পারে । গ্রামীণ ব্যাংকের শিক্ষাবৃত্তি ও উচ্চ শিক্ষাঋণ কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন:   গ্রামীণ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ।  

বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ শিক্ষাবৃত্তি

বাংলাদেশের অনেক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে অভ্যন্তরীণ বৃত্তি প্রদান করে। এগুলো মেধাবী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য।

  • যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি): এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ বৃত্তি এবং শিক্ষার্থী কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে বৃত্তি প্রদান করে । ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে যবিপ্রবি’র ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে ‘অভ্যন্তরীণ বৃত্তি’ হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হয়।   পাশাপাশি, শিক্ষার্থী কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে আরও ২০০ জন শিক্ষার্থীকে চার হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ।  
  • বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মেধাবৃত্তি: ইউজিসি বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মেধabৃabৃত্তি প্রদান করে ।   এছাড়াও, এটি বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পিএইচডি গবেষকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় ফেলোশিপের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে থাকে । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   ইউজিসির মেধাবৃত্তি ও অন্যান্য বৃত্তি পাতা ।  
  • ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড: প্রবাসী কর্মীদের মেধাবী সন্তানদের জন্য ২০১২ সাল থেকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে আসছে। বর্তমানে, এটি এসএসসি এবং এইচএসসি অথবা সমমান ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয় । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের শিক্ষাবৃত্তি পাতা ।  
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব ট্রাস্ট ফান্ড থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে। যেমন, অমর একুশে হল ট্রাস্ট ফান্ড থেকে হলের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয় । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ।  
  • নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়: নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টারে ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মেধা দেখানো শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃত্তি প্রদান করে ।  

আন্তর্জাতিক শিক্ষাবৃত্তি

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ পান। এই বৃত্তিগুলো সাধারণত সম্পূর্ণ অর্থায়িত হয়। অর্থাৎ, এগুলো শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনার খরচ বহন করে।

  • ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম (Fulbright Foreign Student Program): এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি। এটি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ দেয় ।
    • ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম: পরিচিতি ও যোগ্যতা: বাংলাদেশের স্বীকৃত সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে । পূর্বে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি না নেওয়া বা অন্য দেশ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি না নেওয়া শিক্ষার্থীরা যোগ্য নন।   তবে, বাংলাদেশ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা যোগ্য । সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই বছরের পূর্ণকালীন কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে । ইংরেজিতে সাবলীল ও পারদর্শী হতে হবে। ইন্টারনেটভিত্তিক টোফেলে ৯০ বা আইইএলটিএসে ৭.০ স্কোর প্রয়োজন । সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। আবেদনের সময় বাংলাদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে ।  
    • আর্থিক সুবিধা ও অগ্রাধিকার: জে-১ ভিসা সহায়তা দেওয়া হয়। ঢাকাতে প্রাক-প্রস্থান ওরিয়েন্টেশন হয়। যুক্তরাষ্ট্র যাওয়া-আসার বিমান টিকিট, টিউশন ও শিক্ষা-সম্পর্কিত খরচ দেওয়া হয়। জীবনযাপন, খাবার ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য মাসিক উপবৃত্তি, বই কেনার ভাতা, স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা বীমা, ভ্রমণ ও লাগেজ ভাতা প্রদান করা হয় । বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জুনিয়র ফ্যাকাল্টি সদস্য এবং সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, থিংক ট্যাঙ্ক ও এনজিওতে কর্মরত জুনিয়র থেকে মধ্য-স্তরের কর্মকর্তারা অগ্রাধিকার পান ।  
    • আবেদন প্রক্রিয়া: অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয় । একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, সনদপত্র এবং তিনটি সুপারিশপত্র প্রয়োজন হয় ।   অনেক সময়, জিআরই বা জিম্যাট স্কোর প্রয়োজন হতে পারে । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফুলব্রাইট প্রোগ্রাম পাতা ।  
  • ফুলব্রাইট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (FLTA) প্রোগ্রাম: এই ৯ মাস মেয়াদি নন-ডিগ্রি প্রোগ্রামে বাংলাদেশি শিক্ষকরা যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা শেখানোর সুযোগ পান ।
    • যোগ্যতা: বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে । স্বীকৃত সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমপক্ষে চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে । বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইংরেজি বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাত বছরের বেশি শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে । ইংরেজিতে পারদর্শিতা প্রমাণের জন্য টোয়েফলে ন্যূনতম ৮০ বা আইইএলটিএসে ন্যূনতম ৭ স্কোর থাকতে হবে ।  
    • আর্থিক সুবিধা: বিনা খরচে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতার সুযোগ মেলে। পাশাপাশি, পেশাগত দক্ষতা ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থাকে ।  
    • আবেদন প্রক্রিয়া: আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে । পূরণকৃত অনলাইন আবেদন ফরম, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের একাডেমিক নম্বরপত্র, তিনটি সুপারিশপত্র, একাডেমিক রেকর্ডবিষয়ক তথ্য ফরম, টোয়েফল বা আইইএলটিএস স্কোরের সনদ জমা দিতে হয় । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইট ।  
  • কমনওয়েলথ স্কলারশিপ (Commonwealth Scholarship): নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পড়াশোনার সুযোগ করে দেয় ।
    • কমনওয়েলথ স্কলারশিপ: পরিচিতি ও যোগ্যতা: আবেদনকারীদের কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশের নাগরিক হতে হবে । কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির (২:১) স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। এটি সিজিপিএ ৩.০ এর সমতুল্য । পূর্বে বিদেশি বৃত্তি নিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারীরা পিএইচডির জন্য আবেদন করতে পারবেন।   তবে, অন্য কোনো বিদেশি বৃত্তি নিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারীরা দ্বিতীয় স্নাতকোত্তরের জন্য যোগ্য নন ।  
    • আর্থিক সুবিধা: স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির সম্পূর্ণ টিউশন ফি বহন করা হয়। যুক্তরাজ্যে যাওয়া-আসার প্লেন টিকিট দেওয়া হয়। মাসিক ভাতা (লন্ডনের বাইরে £১,০৮৬, লন্ডনের ভেতরে £১,৩৩০) দেওয়া হয়। এককালীন £৪২১ ভাতা, স্টাডি ট্রাভেল গ্রান্ট (£২০০), থিসিস গ্রান্ট (£২২৫) এবং কমনওয়েলথ কমিশন আয়োজিত প্রশিক্ষণ ও সম্মেলনে যোগদানের খরচ বহন করা হয় ।  
    • আবেদন প্রক্রিয়া ও ধাপসমূহ: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মনোনীত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে ।   প্রথমত, ইউজিসির মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। এরপর, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশন সচিবালয়ের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আবেদন করতে হয় । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশনের ওয়েবসাইট ,   ইউজিসির ওয়েবসাইট এবং   ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট ।  
  • ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ (Erasmus Mundus Scholarship): ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও জয়েন্ট মাস্টার্সে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক অর্থায়িত একটি মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি ।
    • ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ: পরিচিতি ও যোগ্যতা: স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। অথবা স্নাতক ডিগ্রির শেষ বছরে থাকতে হবে । জিআরই বা কাজের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক নয় । আইএলটিএস-এ ন্যূনতম ৬.৫ ব্যান্ড স্কোর প্রয়োজন ।  
    • আর্থিক সুবিধা: শতভাগ টিউশন ফি ওয়েভার দেওয়া হয়। ২ বছর প্রতি মাসে ১,১০০ থেকে ১,২০০ ইউরো উপবৃত্তি দেওয়া হয়। যাতায়াত ভাতা এবং সেমিস্টার শেষে এক দেশ থেকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিমানের টিকিটও দেওয়া হয় ।  
    • আবেদন প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতি: আইএলটিএস পরীক্ষায় ভালো স্কোর অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আবেদনপত্রের সাথে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, মোটিভেশন লেটার, সুপারিশপত্র, সিভি, রেসিডেন্স প্রুফ, পাসপোর্ট কপি এবং ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ জমা দিতে হয় । আরও তথ্যের জন্য দেখুন:   ইরাসমাস মুন্ডাস ক্যাটালগ ।  

শিক্ষাবৃত্তি আবেদনের সাধারণ প্রক্রিয়া ও টিপস

শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ প্রাপ্তি একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া। এর জন্য সঠিক প্রস্তুতি ও কৌশল প্রয়োজন। অতএব, শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু সাধারণ নির্দেশনা নিচে দেওয়া হলো:

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ

আবেদনের জন্য কিছু মৌলিক কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে:

  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদপত্র ও নম্বরপত্র (যেমন: এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক, স্নাতকোত্তর) ।  
  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদের স্ক্যান কপি ।  
  • পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (আবেদনকারী এবং ক্ষেত্রবিশেষে মা-বাবার) ।  
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র ।  
  • অভিভাবকের আয়ের সনদ বা আয়কর সনদ ।  
  • সুপারিশপত্র: যে বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা করছেন, সেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সুপারিশপত্র সংগ্রহ করা উচিত। ভাষা দক্ষতা বা জিআরই-জিম্যাটের স্কোর কম হলেও ভালো সুপারিশপত্র আপনাকে এগিয়ে রাখতে পারে ।  
  • হালনাগাদ পাসপোর্ট হাতে রাখা জরুরি। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক বৃত্তির জন্য এটি প্রয়োজন ।  

বৃত্তির সন্ধান ও আবেদন

  • তথ্য উৎস: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (shed.gov.bd) বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য হালনাগাদ সরকারি বৃত্তির তথ্য প্রদান করে । বিভিন্ন দূতাবাসের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজেও বৃত্তির তথ্য প্রকাশ করা হয় । পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, ইউজিসির ওয়েবসাইট (   ugc.gov.bd) , ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট (   britishcouncil.org.bd) এবং   scholars4dev.com এর মতো ওয়েবসাইটগুলোও বৃত্তির তথ্য পাওয়ার নির্ভরযোগ্য উৎস ।  
  • অনলাইন আবেদন: বেশিরভাগ শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ এর আবেদন এখন অনলাইনে সম্পন্ন হয়। নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে ফরম পূরণ করতে হয় ।   উল্লেখ্য, সরাসরি বা ডাকযোগে কোনো আবেদন গ্রহণ করা হয় না ।  
  • আবেদনপত্র লেখার নিয়ম: একটি আনুষ্ঠানিক ও সহজ আবেদনপত্র লিখতে হবে। এতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং একাডেমিক তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে । আর্থিক অসচ্ছলতার বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে ।  
  • সময়সীমা: প্রতিটি বৃত্তির আবেদনের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। সুতরাং, সময়মতো আবেদন জমা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।  

নির্দিষ্ট বৃত্তির আবেদন প্রক্রিয়া

বিভিন্ন শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ এর আবেদন প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। অতএব, নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য বৃত্তির আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:

  • সরকারি বৃত্তির আবেদন প্রক্রিয়া:
    • প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (PMEAT):
      • স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের উপবৃত্তি: estipend.pmeat.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়।
      • ভর্তি সহায়তা: www.eservice.pmeat.gov.bd/admission লিংকে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হয়।
      • চিকিৎসা অনুদান: www.eservice.pmeat.gov.bd/medical লিংকে অনলাইনে আবেদন করা যায়।
      • এম.ফিল/পিএইচডি ফেলোশিপ: www.eservice.pmeat.gov.bd/mnp লিংকে অনলাইনে আবেদন করতে হয়।
      • আবেদনের জন্য ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয় ।  
    • বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মেধাবৃত্তি: ইউজিসির ওয়েবসাইট (ugc.gov.bd) থেকে বৃত্তিসংক্রান্ত সার্কুলারসহ সব তথ্য জানা যায় । আবেদনের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হয়। এতে এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের (যদি থাকে) গ্রুপ/বিষয়, পাসের বছর, মোট নম্বর/জিপিএ/সিজিপিএ ও প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হার উল্লেখ করতে হয়। সত্যায়িত সনদ, ট্রান্সক্রিপ্টসহ জমা দিতে হয় । আবেদনকারীর যদি কোনো প্রকাশনা থাকে, তার বর্ণনা দিতে হবে। আইইএলটিএস স্কোর (যদি থাকে) ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দরখাস্তের সঙ্গে জমা দিতে হয় ।   অবশেষে, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ঠিকানায় দরখাস্তের ‘হার্ড কপি’ পাঠাতে হয় ।  
    • ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড: অনলাইনে www.eservice.bkkb.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয় ।   প্রথমত, মোবাইল নম্বর, নাম, পদবী, ভেরিফিকেশন নম্বর ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় ।   এরপর, প্রোফাইলে একটি ছবি, ব্যাংক ডিটেইলস, সন্তানের তথ্য ও মার্কশীট যুক্ত করে আবেদন সাবমিট করতে হয়। তারপর, অনলাইন আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে নিতে হয় । প্রিন্টকৃত আবেদনে দপ্তর প্রধানের স্বাক্ষর এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বাক্ষর ও সীল নিতে হয় । ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে স্ক্যান করা আবেদনপত্রটি আপলোড দিতে হয়।   অবশেষে, চূড়ান্তভাবে আবেদনপত্র সাবমিট করতে হয় ।  
  • বেসরকারি ও এনজিও বৃত্তির আবেদন প্রক্রিয়া:
    • আরডিআরএস বাংলাদেশ (RDRS Bangladesh): আরডিআরএস প্রদত্ত নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হয়। এই ফর্ম তাদের ওয়েবসাইট এবং জেলা/উপজেলা/শাখা অফিসগুলোতে পাওয়া যায় । আবেদনপত্রের সাথে ছবি, এসএসসি/এইচএসসি সার্টিফিকেট, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হয় ।  
    • ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি: আগ্রহী প্রার্থীদের app.dutchbanglabank.com/DBBLScholarship এই ঠিকানায় নির্ধারিত ফরম পূরণ করে অনলাইনে আবেদন করতে হবে ।   গুরুত্বপূর্ণভাবে, সরাসরি, ডাকযোগে বা কুরিয়ারযোগে কোনো আবেদন গ্রহণ করা হয় না । আবেদনপত্রের সাথে আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবির স্ক্যান কপি, মা-বাবার পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবির স্ক্যান কপি, এসএসসি/সমমান পরীক্ষার নম্বরপত্র ও প্রশংসাপত্রের স্ক্যান কপি, এবং জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদের স্ক্যান কপি প্রয়োজন ।  
    • আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম শিক্ষাবৃত্তি: আবেদন ফরম আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটের অফিস থেকে সংগ্রহ করা যায় । আবেদনপত্রের সাথে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট/জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট/নম্বরপত্রের সত্যায়িত কপি, বিদ্যালয়/মাদ্রাসা প্রধানের প্রশংসাপত্রের সত্যায়িত কপি, জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রের সত্যায়িত কপি, পাসপোর্ট আকারের তিন কপি সত্যায়িত ছবি এবং পূরণকৃত আর্থিক অবস্থা যাচাইয়ের নির্ণায়ক ফরম সংযুক্ত করতে হয় ।   এছাড়াও, আবেদনকারীকে অঙ্গীকার করতে হয় যে, তিনি একজন এতিম/অসহায়/দুঃস্থ/অসচ্ছল পরিবারের সদস্য। তিনি যাকাত-ফেতরা গ্রহণের উপযুক্ত ।  
    • সিজেডএম জিনিয়াস বৃত্তি কর্মসূচি (CZM Genius Scholarship Program): আবেদন শুধুমাত্র অনলাইনে গ্রহণ করা হয় । আবেদন করার পূর্বে সকল তথ্য ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে।   এরপর, মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে সতর্কতার সাথে আবেদন করতে হবে । নিজের পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ভর্তির পে-ইন-স্লিপ, এসএসসি ও এইচএসসি ট্রান্সক্রিপ্ট, জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র, নিজ অধ্যয়নের বিভাগ থেকে প্রত্যয়নপত্র স্ক্যান করে বা পরিষ্কার ছবি তুলে আপলোড করতে হবে । প্রতিটি ফাইলের সাইজ ১০০ কিলোবাইটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে ।   অবশেষে, জিনিয়াস বৃত্তির সম্পূর্ণ আবেদনফর্ম অবশ্যই ইংরেজিতে পূরণ করতে হবে ।  
    • ব্র্যাক শিক্ষাবৃত্তি: নিজেকে কেন বৃত্তিটি পাওয়ার যোগ্য মনে করেন, সে বিষয়ে ২৫০ শব্দের একটি অনুচ্ছেদ লিখতে হয়। এটি আবেদনপত্র হিসেবে বিবেচিত হয় । আবেদনপত্রের সঙ্গে এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ভর্তির সময় জমাকৃত অর্থের রসিদের ফটোকপি, জন্মনিবন্ধন/জাতীয় পরিচয়পত্র, এসএসসি ও এইচএসসির ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল, অভিভাবকের পেশা, আয়কর সনদ, আয়ের সনদ, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এবং যোগাযোগের জন্য মুঠোফোন নম্বর উল্লেখ করতে হয় ।  
    • আকিজ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবৃত্তি: আবেদন ফরম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অফিসের ২০৭ (খ) বৃত্তি শাখা থেকে সংগ্রহ করা যায় । সংযুক্ত প্রোফর্মা অনুযায়ী আবেদন ফর্মে বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষর ও সীলসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রারের অফিসে ২০৭ (খ) নং কক্ষে জমা দিতে হয় । আবেদনপত্রের শর্তাবলী হলো: এইচএসসি/আলিম পরীক্ষার নম্বরপত্রের ফটোকপি, শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ডের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি, পিতা-মাতার আয়ের সনদের ফটোকপি।   তাছাড়া, শিক্ষার্থী দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হলে অবশ্যই প্রতিবন্ধীর সনদ/প্রমাণপত্র দিতে হবে ।  
  • আন্তর্জাতিক বৃত্তির আবেদন প্রক্রিয়া:
    • ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম (Fulbright Foreign Student Program): অনলাইনে পূরণকৃত আবেদন ফরম https://apply.iie.org/ffsp2022 এ পাওয়া যায় । উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পরবর্তীকালে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সনদপত্র জমা দিতে হয় । তিনজন সুপারিশকারী পৃথকভাবে অনলাইন আবেদন পোর্টালে সরাসরি তিনটি সুপারিশপত্র আপলোড করেন ।  
    • ফুলব্রাইট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (FLTA) প্রোগ্রাম: আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে । পূরণকৃত অনলাইন আবেদন ফরম, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের একাডেমিক নম্বরপত্র, তিনটি সুপারিশপত্র (সুপারিশকারীরা সরাসরি অনলাইন পোর্টালে আপলোড করবেন), একাডেমিক রেকর্ডবিষয়ক তথ্য ফরম, টোয়েফল বা আইইএলটিএস স্কোরের সনদ জমা দিতে হয় ।  
    • কমনওয়েলথ স্কলারশিপ (Commonwealth Scholarship): বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মনোনীত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে ।   প্রথমত, ইউজিসির মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। এরপর, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশন সচিবালয়ের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আবেদন করতে হয়। এতে বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, একাডেমিক পুরস্কার, প্রকাশনার বিবরণ, পেশাগত অভিজ্ঞতা, একাডেমিক বা পেশাগত প্রশিক্ষণ এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের বিবরণ সহ আবেদন করতে হয় । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থল থেকে তিনটি সুপারিশপত্র সংগ্রহ করতে হয় ।  
    • ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ (Erasmus Mundus Scholarship): আবেদন করার জন্য প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ইরাসমাস মুন্ডাস ক্যাটালগে যেতে হবে। সেখানে প্রত্যেক প্রোগ্রামের নাম ও লোকেশন পাওয়া যাবে। এরপর, কোর্স, আবেদন প্রক্রিয়া ও স্কলারশিপ সম্পর্কে আরও তথ্য জানার থাকলে সরাসরি কনটাক্ট প্রজেক্ট পারসন বাটন প্রেস করে যোগাযোগ করা যাবে । আবেদনপত্রের সাথে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, মোটিভেশন লেটার, দুটি রেকমেন্ডেশন লেটার, পূরণকৃত আবেদনপত্র, সিভি, রেসিডেন্স প্রুফ, পাসপোর্ট কপি এবং ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ জমা দিতে হয় ।  

শিক্ষাবৃত্তি সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি

সাক্ষাৎকার শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ প্রাপ্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সুতরাং, এর জন্য পূর্বপ্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি।

  • সাধারণ প্রশ্নাবলী: সাক্ষাৎকারে সাধারণত নিজের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। কেন এই বৃত্তি প্রয়োজন, বৃত্তির অর্থ কীভাবে ব্যবহার করা হবে, নিজের শক্তি ও দুর্বলতা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, পছন্দের বিষয়, অনুপ্রেরণার উৎস ইত্যাদি বিষয়েও প্রশ্ন করা হয় । আন্তর্জাতিক বৃত্তির ক্ষেত্রে, কেন নির্দিষ্ট দেশ বা বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেওয়া হয়েছে, কেন নির্দিষ্ট কোর্সটি পড়া হচ্ছে এবং কোর্স সম্পন্ন করার পর দেশের কল্যাণে কীভাবে ভূমিকা রাখা হবে, এমন প্রশ্নও করা হয় ।  
  • প্রস্তুতি কৌশল:
    • আত্মপরিচয়: নিজের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ও কার্যকরভাবে বলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, আগ্রহ এবং লক্ষ্য প্রতিফলিত হয় ।  
    • লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: শিক্ষাবৃত্তি কেন প্রয়োজন তা স্পষ্ট করতে হবে। এর মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান কীভাবে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে কাজে লাগানো হবে, তাও তুলে ধরতে হবে ।  
    • শক্তি ও দুর্বলতা: নিজের শক্তিগুলো আত্মবিশ্বাসের সাথে তুলে ধরতে হবে। দুর্বলতাগুলো স্বীকার করে সেগুলো কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করতে হবে ।  
    • অনুপ্রেরণা: জীবনে কাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং কেন, তা বলতে প্রস্তুত থাকতে হবে ।  
    • বিষয় জ্ঞান: যে বিষয়ে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক, সে সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে ।  
    • দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা: কোর্স সম্পন্ন করার পর দেশের উন্নয়নে কীভাবে অবদান রাখা যায়, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তুলে ধরা উচিত ।  

শিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কিত ভুল ধারণা

শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে। এগুলো তাদের আবেদন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। অতএব, এই ভুল ধারণাগুলো দূর করা জরুরি।

  • সাধারণ ভুল ধারণা:
    • আইএলটিএস/টোয়েফেল স্কোরই সব: অনেকে মনে করেন, আইএলটিএস বা টোয়েফেল স্কোর ভালো হলেই বৃত্তি নিশ্চিত। বাস্তবে, এটি কেবল আবেদনের একটি মানদণ্ড। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ৬ বা ৬.৫ স্কোর থাকলেও আবেদন গ্রহণ করে। এমনকি, অনেক সময় স্কোর ছাড়াই আবেদনের সুযোগ দেয়। তবে, পরে ভর্তির আগে স্কোর জমা দেওয়ার শর্তও দেয় । ভালো স্কোর থাকা ভালো, কিন্তু এটিই একমাত্র নির্ধারক নয়। অন্যান্য যোগ্যতাও গুরুত্বপূর্ণ ।  
    • কম সিজিপিএ হলে বিদেশে পড়া অসম্ভব: এটি একটি ভুল ধারণা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কম সিজিপিএ থাকলেও আবেদন গ্রহণ করে। বিশেষ করে, ইরাসমাস মুন্ডাস বৃত্তির মতো ক্ষেত্রে ২.৫০ থেকে ৩.০০ সিজিপিএ নিয়েও আবেদন গৃহীত হয়েছে । মেধা ও পরিশ্রমের পাশাপাশি অন্যান্য যোগ্যতা, যেমন গবেষণা বা কাজের অভিজ্ঞতা, আবেদনকে শক্তিশালী করতে পারে ।  
  • আর্থিক ও জীবনযাত্রা সম্পর্কিত ভুল ধারণা:
    • শুধু ফুল ফান্ডিং ছাড়া পড়া যাবে না: ফুল ফান্ডিং না পেলেও বিদেশে পড়াশোনা করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে, টিউশন ফি জোগাড়ের জন্য খণ্ডকালীন কাজ করার সুযোগ থাকে ।   আবার, অনেকে মনে করেন, টাকা থাকলেই বিদেশে পড়া যায়। এটিও ভুল। ভর্তি হওয়া গেলেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে মেধা ও পরিশ্রম অপরিহার্য ।  
    • বিদেশে জীবনযাত্রা সহজ: বিদেশে পড়ালেখা করতে গেলে তেমন কষ্ট করতে হয় না, এমন ধারণা ভুল। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে শিক্ষার্থী ভিসাধারীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা কাজ করার বৈধতা পান। এটি দিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানো কঠিন হতে পারে । টিউশন ফির জন্য ভালো অঙ্কের টাকা বাংলাদেশ থেকে আনতে হতে পারে ।   ফলস্বরূপ, নতুন পরিবেশ, আবহাওয়া এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে ।  

উপসংহার

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণের এক অসাধারণ সুযোগ। আর্থিক অসচ্ছলতা অনেক সময় মেধাবী শিক্ষার্থীদের পথ আটকে দিলেও, বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাবৃত্তি এই বাধা অতিক্রম করতে সহায়তা করে। এই বৃত্তিগুলো কেবল আর্থিক সহায়তা প্রদান করে না, বরং শিক্ষার্থীদের মেধার স্বীকৃতি দেয় এবং তাদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের যোগ্যতা, আগ্রহ এবং লক্ষ্য অনুযায়ী সঠিক বৃত্তির সন্ধান করা। আবেদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ, যেমন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ, আবেদনপত্র পূরণ, এবং সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতিতে যত্নশীল হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো পরিহার করে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। কারণ, সঠিক তথ্য সংগ্রহ, সময়োপযোগী আবেদন এবং অধ্যবসায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে।

পরিশেষে, প্রতিটি শিক্ষার্থীকে তাদের স্বপ্ন পূরণে আত্মবিশ্বাসী হতে এবং উপলব্ধ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে উৎসাহিত করা হয়। শিক্ষাবৃত্তি বাংলাদেশ কেবল একটি ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।