২০২৫ সালের জুন মাসে কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ একটি জটিল ও পরিবর্তনশীল জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ এর পুনরুত্থান, ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব এবং চিকুনগুনিয়ার পুনরায় আবির্ভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয় । এই সম্মিলিত সংক্রামক রোগের হুমকি দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্য অবকাঠামোর উপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!এছাড়াও, কলেরা এবং এভিয়ান ফ্লু (H5N1) এর মতো অন্যান্য সংক্রামক রোগগুলোও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, যা হামের মতো রোগের চলমান চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরে ।
SaziBox Health এই বিষয়ে নিয়মিত আপডেট প্রদান করে।
বর্তমান পরিস্থিতি কেবল বিচ্ছিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব নয়, বরং এটি কাঠামোগত দুর্বলতার সম্মিলিত চিত্র। সীমিত পরীক্ষার কারণে ডেটার গুরুতর ঘাটতি, জনস্বাস্থ্য নির্দেশিকাগুলির প্রতি জনসাধারণের উদাসীনতা এবং ইউএসএআইডি (USAID) থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক তহবিলের কাটছাঁটের মারাত্মক প্রভাব এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ।
উপরন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনকে ভেক্টর-বাহিত রোগের “হুমকি গুণক” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে । এই প্রতিবেদনটি জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলির একটি ব্যাপক বিশ্লেষণ প্রদানের লক্ষ্য রাখে, যা
দ্য ডেইলি স্টার সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। এটি বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের কৌশলগত প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গভীর ধারণা দেবে। ফলস্বরূপ, SaziBox Health-এর সংক্রামক রোগ বিভাগে কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর এই স্বাস্থ্য সংকটগুলি সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এটি সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য বোঝা বাড়িয়ে তুলছে এবং নিয়ন্ত্রণকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলবে।
কোভিড-১৯: পরিবর্তিত পরিস্থিতি
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও পরিসংখ্যান (জুন ২০২৫)
২০২৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি সংক্রমণের একটি নতুন ঢেউয়ের ইঙ্গিত দেয় ।
উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (DGHS) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে ২৩টি, মে মাসে ৮৬টি এবং জুন মাসের প্রথম আট দিনে ৩৬টি নতুন কেস ও একটি মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে । এই পরিস্থিতিতে কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক।
২০২৫ সালের ১৮ জুন পর্যন্ত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্যাশবোর্ড অনুযায়ী, মহামারীর শুরু থেকে মোট ২০,৫১,৬৭৬টি নিশ্চিত কেস এবং ২৯,৫০৬টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে । ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ৩,৮৫৪টি পরীক্ষার মধ্যে ৩৩৩টি নিশ্চিত কেস এবং ৭টি মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে । সর্বশেষ ২৪ ঘন্টার তথ্য (১৮ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত) অনুযায়ী, ৩০৮টি পরীক্ষার মধ্যে ২৮টি নতুন নিশ্চিত কেস পাওয়া গেছে। দৈনিক পজিটিভিটি রেট ছিল ৯.০৯%। এই নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নতুন মৃত্যুর খবর নেই ।
২০২৫ সালের ৮ জুনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো, মাত্র ৪টি নমুনা পরীক্ষার ভিত্তিতে দৈনিক শনাক্তের হার ছিল ৭৫% । এই অত্যন্ত কম পরীক্ষার সংখ্যা সামগ্রিক মহামারী পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে না।
তা সত্ত্বেও, কম পরীক্ষার সংখ্যা সত্ত্বেও, স্বাস্থ্য বাতায়ন হটলাইন (১৬২৬৩) এ কলের সংখ্যা বাড়ছে। এটি জনসাধারণের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ এবং সঠিক তথ্যের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে সরকারিভাবে রিপোর্ট করা কেসের সংখ্যা এবং সমাজে অনুভূত সংক্রমণের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য রয়েছে ।
নতুন কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্টের আগমন
কোভিড-১৯ এর এই পুনরুত্থান নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাবের সাথে যুক্ত। বিশেষ করে, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (icddr,b) এর গবেষকরা বাংলাদেশে ওমিক্রন JN.1 এর দুটি নতুন উপ-ভ্যারিয়েন্ট, XFG এবং XFC, সনাক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই ভ্যারিয়েন্টগুলি প্রথম ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিহ্নিত করা হয়েছিল ।
কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর জন্য এটি একটি নতুন চ্যালেঞ্জ।
NB.1.8.1 ভ্যারিয়েন্টটিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ২৩ মে-এর বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে, যদিও এটি অত্যন্ত সংক্রামক, পূর্ববর্তী স্ট্রেনগুলির তুলনায় এটি উচ্চতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে না। প্রতিবেশী ভারতের সাথে ভৌগোলিক ও সামাজিক সংযোগ রয়েছে। সেখানে NB.1.8.1 সহ নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলির সংখ্যা বাড়ছে। এটি বাংলাদেশে ভাইরাসের বিস্তারকে প্রভাবিত করতে পারে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা JN.1 উপ-ভ্যারিয়েন্ট এবং এর সম্পর্কিত স্ট্রেনগুলিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট’ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। তবে এখনও এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়নি। এটি চলমান পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে ।
কোভিড-১৯ পরীক্ষা ও ডেটা সংগ্রহে চ্যালেঞ্জ
পরীক্ষার সীমিত ক্ষমতা এবং ঢাকায় পরীক্ষার কিটের ঘাটতিকে প্রধানত “গুরুতর ডেটা ঘাটতি” এর কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে । স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর এই ঘাটতির কথা স্বীকার করেছেন ।
ফলস্বরূপ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এই কম পরীক্ষার হার সমাজে সংক্রমণের প্রকৃত ব্যাপ্তি আড়াল করতে পারে। এটি প্রাদুর্ভাবের প্রকৃত মাত্রা নির্ণয় করা কঠিন করে তোলে । এই ডেটা ঘাটতি কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর প্রকৃত চিত্র আড়াল করে।
পরীক্ষার ক্ষমতা ও ডেটা ঘাটতি
এছাড়াও, ডেটা চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করে তুলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ডেটা যাচাইকারী ডেস্কের কর্মীদের সংখ্যা হ্রাস। এটি ব্যাপক ডেটা সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ প্রচেষ্টাকে সরাসরি বাধাগ্রস্ত করে । ১৪ জুন ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে যে, পুরোনো লগ এবং কর্তব্যরত মেডিকেল কর্মীদের অভাবে সঠিক রোগীর ডেটা ট্র্যাকিং করা কঠিন ছিল। এটি রিয়েল-টাইম ডেটা ব্যবস্থাপনায় পদ্ধতিগত সমস্যা নির্দেশ করে ।
জনসাধারণের উদাসীনতা ও ডেটার অসঙ্গতি
কম কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা, কিটের ঘাটতি এবং ডেটা যাচাইকারী কর্মীদের সংখ্যা হ্রাস একটি গুরুতর ডেটা ঘাটতি তৈরি করে। ফলস্বরূপ, এই ডেটা ঘাটতি সমাজে সংক্রমণের প্রকৃত ব্যাপ্তিকে কম করে দেখায়। এর ফলে, এই কম অনুমান জনসাধারণের মধ্যে কম ঝুঁকির ধারণা তৈরি করে। তাদের মধ্যে উদাসীনতা দেখা যায়, যেখানে লক্ষণগুলিকে উপেক্ষা করা হয় বা সাধারণ ফ্লু হিসাবে ভুল করা হয়। এভাবে, একটি নেতিবাচক চক্র তৈরি হয়: কম ঝুঁকি অনুভূত হওয়ায় কম পরীক্ষা হয় এবং স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মানা হয় না। এই পরিস্থিতি সঠিক ডেটা সংগ্রহে বাধা দেয়। এর পরিণতিতে, সমস্যার প্রকৃত ব্যাপ্তি আরও অস্পষ্ট হয়ে যায় এবং কার্যকর জনস্বাস্থ্য হস্তক্ষেপ ব্যাহত হয়। তাছাড়া, স্বাস্থ্য হটলাইনে কলের সংখ্যা বৃদ্ধি এই লুকানো বোঝা এবং জনসাধারণের উদ্বেগের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসাবে কাজ করে।
টেস্টিং কিটের প্রাপ্যতা সম্পর্কে প্রদত্ত তথ্যে একটি সরাসরি অসঙ্গতি রয়েছে। যখন একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা “প্রচুর” এবং “কোনো ঘাটতি নেই” বলে আশ্বাস দেন ,
অন্যদিকে অন্যান্য প্রতিবেদন, এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজেও “কিটের ঘাটতি” এবং সরকারি হাসপাতালে তাদের অনুপস্থিতির কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন । এই অসঙ্গতি জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য যোগাযোগ বিভ্রাট নির্দেশ করে। এটি রিয়েল-টাইম ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনার অভাব বা সম্পদ সীমাবদ্ধতার তীব্রতাকে কমিয়ে দেখানোর ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়। এর ফলে জনবিশ্বাসে চিড় ধরতে পারে এবং কার্যকর প্রতিক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির অবস্থা ও জনসম্পৃক্ততা
নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলির আবির্ভাব এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণের সম্ভাব্য তীব্রতার কারণে টিকাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ।
অতএব, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মোশতাক হোসেন ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী এবং যাদের শেষ ভ্যাকসিন ডোজ ছয় মাসের বেশি সময় আগে নেওয়া হয়েছে তাদের জন্য বুস্টার ডোজের সুপারিশ করেছেন। এটি হালনাগাদ সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে ।
কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর টিকাদান কর্মসূচির পুনরুজ্জীবন জরুরি।
৩.১ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজের পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও, যার মধ্যে ১.৭ মিলিয়ন ডোজ আগস্টের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে, টিকাদানে জনসাধারণের আগ্রহ উদ্বেগজনকভাবে কম। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ মার্চের মধ্যে মাত্র ৪৩ জন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। তাদের বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারী ছিলেন ।
ফলস্বরূপ, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতির কারণে সরকার টিকাদান কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার কথা বিবেচনা করছে ।
তবে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে চলা ভ্যাকসিনের বিশাল মজুদ এবং টিকাদানে জনসাধারণের অত্যন্ত কম আগ্রহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোভিড-১৯ টিকাদান কৌশলে একটি গুরুতর ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে ।
মূলত, বর্তমান পদ্ধতিটি প্রতিক্রিয়াশীল এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা দ্বারা চালিত। এই পরিস্থিতি উদীয়মান ভ্যারিয়েন্টগুলির বিরুদ্ধে জনগোষ্ঠীর অনাক্রম্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি সক্রিয় প্রচারণার অভাব নির্দেশ করে। ফলস্বরূপ, জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে। এটি রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে একটি বড় সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
কোভিড-১৯ এর প্রতি জনগণের প্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা
স্বাস্থ্য সতর্কতা এবং ক্রমবর্ধমান কেসের সংখ্যা সত্ত্বেও, কোভিড-১৯ সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের প্রতি জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া মূলত উদাসীন । এই উদাসীনতার কারণগুলি বিভিন্ন হতে পারে।
যেমন, কিছু ব্যক্তি উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করে, যারা মনে করেন “মানুষ কেবল অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।” অন্যরা জ্বর, শরীর ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের মতো কোভিড-এর সাধারণ লক্ষণগুলিকে “মৌসুমী ফ্লু” এর মতো সাধারণ অসুস্থতা হিসাবে ভুল করে ।
এই জনসাধারণের উদাসীনতা মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো দায়িত্বশীল জনস্বাস্থ্য আচরণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটি সঠিক ডেটা সংগ্রহকেও ব্যাহত করতে পারে। কারণ কম সংখ্যক মানুষ পরীক্ষা করাতে বা তাদের লক্ষণগুলি রিপোর্ট করতে চায় ।
এছাড়াও, একটি সাধারণ প্রবণতা হলো, সংক্রমণের হার কমে গেলে জনসচেতনতা এবং স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলার প্রবণতা শিথিল হয়ে যায়। এটি অজান্তেই নতুন ঢেউয়ের উত্থানে অবদান রাখতে পারে ।
বিশেষজ্ঞরা এই নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলি সম্পর্কে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে বয়স্ক এবং যাদের পূর্ব-বিদ্যমান স্বাস্থ্যগত অবস্থা রয়েছে, তারা গুরুতর পরিণতির জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ । কেসের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায়, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (DGHS) একটি ১১-দফা স্বাস্থ্য নির্দেশিকা জারি করেছে। এতে জনসাধারণকে বড় জনসমাগম এড়িয়ে চলতে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে ।
ডেঙ্গু: রাজধানীর বাইরেও এক স্থায়ী হুমকি
ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব ও ভৌগোলিক বিস্তার
২০২৫ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি এই বছরের সর্বোচ্চ দৈনিক সংখ্যা নির্দেশ করে ।
এটি কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর জন্য একটি দ্রুত বর্ধনশীল জনস্বাস্থ্য সংকট। ফলস্বরূপ, ২০২৫ সালের ১২ জুন পর্যন্ত, একদিনে সারাদেশে ২৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ২৭৬টি কেস, যা দৈনিক মোট সংখ্যার ৯৫% এরও বেশি, ঢাকার বাইরের জেলাগুলি থেকে এসেছে ।
এই প্রবণতা ২০২৫ সালের বৃহত্তর প্যাটার্নের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ পর্যন্ত রেকর্ড করা ৫,৩০৩টি ডেঙ্গু কেসের মধ্যে ৪,০১২টি (৭৫% এর বেশি) রাজধানীর বাইরের এলাকা থেকে রিপোর্ট করা হয়েছে ।
বিশেষ করে, ঢাকার বাইরের নির্দিষ্ট হটস্পটগুলির মধ্যে বরিশাল বিভাগ উল্লেখযোগ্য। সেখানে ২২৭৫টি কেস (সিটি কর্পোরেশন এলাকা ব্যতীত) রিপোর্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে বরগুনা একটি বিশেষভাবে প্রভাবিত জেলা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যেখানে ১,৪০৬টি কেস রেকর্ড করা হয়েছে—যা যেকোনো জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যান্য অঞ্চলেও কেসের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে: চট্টগ্রাম (৮৩৬), ঢাকা (৫৩৫), খুলনা (১৬৫), ময়মনসিংহ (৯৬), রাজশাহী (৮৭), রংপুর (১৯) এবং সিলেট (১৯) ।
তুলনামূলক তথ্য থেকে দেখা যায়, ২০২৫ সালের ২৫ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩,৯৭২টি কেস এবং ২৩টি মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এটি ২০২৪ সালের একই সময়ের (২,৮৫৩টি কেস এবং ৪১টি মৃত্যু) তুলনায় কেসের সংখ্যা বেশি হলেও মৃত্যুর সংখ্যা কম ।
তবে, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত, এই বছরের মোট নিশ্চিত কেসের সংখ্যা ৬,৪৬৬ এ পৌঁছেছে। মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ এ অপরিবর্তিত রয়েছে ।
ঢাকার বাইরে থেকে ডেঙ্গুর অনুপাত (দৈনিক হাসপাতালে ভর্তির ৯৫% এর বেশি, ২০২৫ সালের মোট মামলার ৭৫%) বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারীর মৌলিক পরিবর্তন নির্দেশ করে। এটি আর প্রাথমিকভাবে শহুরে, রাজধানী-কেন্দ্রিক সমস্যা নয়,
বরং একটি ব্যাপক জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। এটি বিশেষ করে গ্রামীণ এবং আধা-শহুরে অঞ্চলগুলিকে প্রভাবিত করছে। ঝুঁকির এই বিকেন্দ্রীকরণ পূর্ববর্তী স্থানীয় নিয়ন্ত্রণ কৌশলগুলির একটি গুরুতর ব্যর্থতা উন্মোচন করে। এটি একটি সত্যিকারের জাতীয়, ন্যায়সঙ্গত এবং বিকেন্দ্রীভূত জনস্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া দাবি করে।
ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির মূল কারণসমূহ
বিশেষজ্ঞরা ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু মামলার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করেছেন: অপর্যাপ্ত মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে কম সচেতনতা এবং একই সাথে একাধিক ডেঙ্গু সেরোটাইপের ব্যাপক উপস্থিতি । বরগুনার মতো উপকূলীয় অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যও এই সমস্যায় উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। সেখানকার বাসিন্দারা প্রায়শই জল সংরক্ষণ করে, যা অজান্তেই এডিস মশার প্রজননের জন্য আদর্শ স্থান তৈরি করে । এই কারণগুলো কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে।
মশা নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতার অভাব
তাছাড়া, পদ্মা সেতুর মতো উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা বরিশালকে দেশের বাকি অংশের সাথে সংযুক্ত করেছে, তা অজান্তেই রোগের দ্রুত ভৌগোলিক বিস্তারে অবদান রাখতে পারে । একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো জনসংখ্যার অনাক্রম্যতার পার্থক্য। ঢাকার বিপরীতে, যেখানে ২০০০ সাল থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন ডেঙ্গু সেরোটাইপের সংস্পর্শে এসেছে (যা কিছু স্তরের অনাক্রম্যতা প্রদান করে),
অন্যদিকে রাজধানীর বাইরের জনসংখ্যার পূর্ববর্তী সংস্পর্শ অনেক কম ছিল। এটি তাদের গুরুতর সংক্রমণের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে ।
নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
উপরন্তু, ঢাকার বাইরের অঞ্চলে দ্রুত নগরায়নও নতুন পরিবেশ তৈরি করছে যেখানে এডিস মশা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে প্রসারিত শহুরে এবং আধা-শহুরে পরিবেশে প্রায়শই সঠিক নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব থাকে । জলবায়ু পরিবর্তন, যা ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, পরিবর্তিত বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং ঘন ঘন চরম আবহাওয়ার ঘটনা দ্বারা চিহ্নিত, ভেক্টর-বাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গুর ভৌগোলিক পরিসর প্রসারিত করে এবং সংক্রমণকে তীব্র করে তোলে ।
জলবায়ু পরিবর্তন, যা ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং পরিবর্তিত বৃষ্টিপাতের ধরণ দ্বারা চিহ্নিত, ডেঙ্গুর জন্য কেবল একটি পটভূমি উপাদান নয়, বরং একটি সরাসরি “হুমকি গুণক”। এটি সংক্রমণকে তীব্র করে এবং এর ভৌগোলিক বিস্তার বাড়িয়ে তোলে ।
এছাড়াও, এই পরিবেশগত পরিবর্তন, প্রধান শহরগুলির বাইরে দ্রুত এবং প্রায়শই অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং উন্নত সংযোগের সাথে মিলিত হয়ে , ভেক্টর-বাহিত রোগের বিস্তারের জন্য একটি উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করে।
সুতরাং, কার্যকারণ শৃঙ্খলটি স্পষ্ট: জলবায়ু পরিবর্তন মশার জন্য আরও অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে, অন্যদিকে নগরায়ন এবং সংযোগ তাদের প্রজনন এবং সংক্রামিত ব্যক্তিদের চলাচলকে সহজ করে। এর ফলে ব্যাপক এবং আরও তীব্র প্রাদুর্ভাব ঘটে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে চ্যালেঞ্জ
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাজধানীর বাইরে মশা নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো এবং অনুশীলনের সুস্পষ্ট দুর্বলতা। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে ঢাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ অপর্যাপ্ত হলেও, গ্রামীণ এবং আধা-শহুরে অঞ্চলে পরিস্থিতি আরও খারাপ ।
ফলস্বরূপ, ডেঙ্গু প্রাথমিকভাবে ঢাকা-কেন্দ্রিক সমস্যা—এই ধারণাটি অন্যান্য অঞ্চলে অবহেলা এবং জরুরি অবস্থার অভাব তৈরি করে। এটি কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং সম্প্রদায়ের পদক্ষেপকে কঠিন করে তোলে ।
কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
পুরো দেশজুড়ে ব্যাপক মশা নিয়ন্ত্রণের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়েছেন যে এডিস মশার বিস্তার কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারকে সমস্ত জেলার জন্য সমান মনোযোগ এবং সংস্থান নিশ্চিত করতে হবে ।
তবে, এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা একটি জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল (২০২৪-২০৩০) এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে। কীটতাত্ত্বিক জরিপের জন্য তহবিল বরাদ্দ করেছে। দেশজুড়ে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। ডেঙ্গু পরীক্ষার সুবিধা স্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি ডেঙ্গু ট্র্যাকার অ্যাপ্লিকেশনও তৈরি করেছে। তারা পরীক্ষার কিট ও মশারি বিতরণ করেছে, পাশাপাশি স্যালাইন সরবরাহ নিশ্চিত করেছে ।
চিকুনগুনিয়া: অন্যান্য সংকটের মাঝে পুনরুত্থান
চিকুনগুনিয়ার বর্তমান অবস্থা ও আক্রান্ত এলাকা
ঢাকায় চিকুনগুনিয়া পুনরায় আবির্ভূত হয়েছে। এটি দেশের জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জে একটি নতুন জটিলতা যোগ করেছে। দেশ ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস এবং মশা-বাহিত ডেঙ্গুর ক্রমবর্ধমান মামলার সাথে লড়াই করছে । এটি কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর জন্য একটি নতুন উদ্বেগ। যেমন, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ মে পর্যন্ত, ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (IEDCR) কমপক্ষে ৩৩৭টি সন্দেহভাজন চিকুনগুনিয়া মামলার কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে ১৫৩টি RT-PCR পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে ।
এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সন্দেহভাজন এবং নিশ্চিত উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। এটি ঢাকার একাধিক শহুরে অঞ্চলে সংক্রমণের বৃদ্ধি নির্দেশ করে । ঢাকার মধ্যে প্রভাবিত অঞ্চলগুলি ব্যাপক, যার মধ্যে রয়েছে মহাখালী, তেজগাঁও, নাখালপাড়া, খিলক্ষেত, নিকেতন, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, উত্তরা, লালবাগ, আজিমপুর, শান্তিনগর, মালিবাগ, খিলগাঁও, মুগদা, গোড়ান, রামপুরা এবং শাহজাহানপুর। ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ উভয় সিটি কর্পোরেশন থেকে কেস রিপোর্ট করা হয়েছে, যা ব্যাপক শহুরে সংক্রমণকে প্রতিফলিত করে ।
এছাড়াও, ২০২৪/২০২৫ সালে চিকুনগুনিয়ার পুনরায় আবির্ভাব তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ২০১৭ সালের বড় প্রাদুর্ভাবের পর সাত বছরের বিরতির পরে ঘটেছে । এটি রোগের একটি চক্রাকার প্রকৃতি এবং কম কার্যকলাপের সময়কালের পরে ভবিষ্যতের প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা নির্দেশ করে। ঢাকার বাইরে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির এবং হোস্ট সম্প্রদায়গুলিতে ব্যাখ্যাতীত জ্বরের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি রয়েছে। এর লক্ষণগুলি সম্ভাব্য চিকুনগুনিয়া প্রাদুর্ভাবের দৃঢ় ইঙ্গিত দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দলগুলি এই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তদন্ত এবং পরীক্ষার জন্য একত্রিত হয়েছে ।
ডেঙ্গু ও কোভিড-১৯ এর সাথে চিকুনগুনিয়ার লক্ষণগত সাদৃশ্য ও রোগ নির্ণয়ের চ্যালেঞ্জ
একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হলো চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু এবং জিকা একই এডিস মশা দ্বারা সংক্রামিত হয়। গুরুত্বপূর্ণভাবে, তাদের লক্ষণগুলি প্রায়শই একই রকম হয়। এটি সঠিক ও সময়োপযোগী রোগ নির্ণয়কে কঠিন করে তোলে ।
যেমন, চিকিৎসা পেশাদাররা নির্দিষ্ট ওভারল্যাপ এবং সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলি উল্লেখ করেছেন। কোভিড-১৯ রোগীরা জ্বর ও সর্দির সাথে গন্ধের অনুভূতি হ্রাস এবং হালকা ডায়রিয়া রিপোর্ট করতে পারে। সর্দি ছাড়া জ্বর ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া নির্দেশ করতে পারে । এই লক্ষণগত সাদৃশ্য কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর রোগ নির্ণয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে।
চিকুনগুনিয়ার জন্য একটি নিয়মিত জাতীয় নজরদারি ব্যবস্থার অনুপস্থিতি রয়েছে। দেশের সীমিত ডায়াগনস্টিক সক্ষমতার সাথে মিলিত হয়ে, এর অর্থ হলো রিপোর্ট করা সংখ্যাগুলি সম্ভবত সংক্রমণের প্রকৃত ব্যাপ্তিকে কম করে দেখায়। এটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর একটি লুকানো বোঝা তৈরি করে ।
এ কারণে, যেহেতু চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা ব্যাপকভাবে উপলব্ধ নয়, তাই ডেঙ্গুর জন্য নেতিবাচক পরীক্ষা করা রোগীদের প্রায়শই কয়েক দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যদি লক্ষণগুলি অব্যাহত থাকে, তবে তাদের চিকুনগুনিয়া রোগী হিসাবে চিকিৎসা করা হতে পারে। এটি নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় বিলম্ব ঘটায় ।
চিকুনগুনিয়ার পুনরায় আবির্ভাব, বিশেষ করে ডেঙ্গু এবং কোভিড-১৯ এর সাথে এর লক্ষণগত সাদৃশ্য , এবং “চিকুনগুনিয়ার জন্য একটি নিয়মিত জাতীয় নজরদারি ব্যবস্থার অনুপস্থিতি” ও “সীমিত ডায়াগনস্টিক সক্ষমতা” এর স্পষ্ট উল্লেখ বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য নজরদারিতে একটি গুরুতর অন্ধ স্থান তুলে ধরে।
ফলস্বরূপ, মামলাগুলি সম্ভবত উল্লেখযোগ্যভাবে কম অনুমান করা হয়। এটি একটি “অদৃশ্য” মহামারী সৃষ্টি করে যা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে স্বীকৃত বা পর্যাপ্তভাবে সংস্থান ছাড়াই চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়াও, অ-অগ্রাধিকার বা লক্ষণ-ওভারল্যাপিং রোগগুলির জন্য এই পদ্ধতিগত ব্যবধানের অর্থ হলো সংস্থানগুলি ভুলভাবে বরাদ্দ করা হয় এবং প্রকৃত বোঝা অজানা থাকে।
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর চিকুনগুনিয়ার প্রভাব
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এই তিনটি রোগের—কোভিড-১৯, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার—একই সাথে বিস্তার ইতিমধ্যে চাপের মধ্যে থাকা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর একটি উল্লেখযোগ্য ও অপ্রতিরোধ্য বোঝা সৃষ্টি করতে পারে । এটি কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, বেশিরভাগ চিকুনগুনিয়া রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। এটি ইনপেশেন্ট লোড কমায়। কিন্তু এটি বিপরীতভাবে কেসগুলি সনাক্ত না হওয়া এবং সরকারি পরিসংখ্যানে রেকর্ড না হওয়ার কারণ হতে পারে। এটি প্রাদুর্ভাবের প্রকৃত মাত্রা কমিয়ে দেখাতে আরও অবদান রাখে ।
চিকুনগুনিয়ার স্বতন্ত্র লক্ষণগুলি হলো গুরুতর জয়েন্ট পেইন যা এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং রোগীদের দাঁড়াতে বাধা দিতে পারে। এটি ডেঙ্গুর সাধারণ পেশী ব্যথার থেকে ভিন্ন, যা সাত দিনের মধ্যে কমে যায়। এর জন্য সতর্ক ক্লিনিকাল পর্যবেক্ষণ এবং ডিফারেনশিয়াল রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজন। এটি রোগীর ব্যবস্থাপনায় জটিলতা যোগ করে ।
এছাড়াও, ঈদ ছুটির সময় হাজার হাজার মানুষের দেশজুড়ে ভ্রমণ নতুন অঞ্চলে এই রোগগুলি ছড়িয়ে দিতে পারে। এটি স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলিকে চাপ দিতে পারে ।
যৌগিক রোগীর বোঝা কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোশতাক হোসেন একটি স্পষ্ট প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং তৃতীয় স্তরের যত্ন সহ একটি স্তরযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি একটি শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্কের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, অনেক লোক, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে, স্থানীয় সুবিধাগুলিতে অ্যাক্সেসের অভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা এড়িয়ে যায়। এর ফলে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হয়। তিনি মাঝারি কেসগুলি পরিচালনা করার জন্য রক্ত নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র এবং মাধ্যমিক যত্ন ইউনিটগুলি সম্প্রসারণের প্রস্তাবও করেছেন। এটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিকে গুরুতর রোগীদের উপর মনোযোগ দিতে দেবে। গুরুতর কেসগুলি প্রয়োজন অনুযায়ী মাধ্যমিক থেকে তৃতীয় হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হবে ।
সুতরাং, জলবায়ু পরিবর্তনকে চিকুনগুনিয়ার জন্য একটি সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ মহামারী হুমকি হিসাবে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি এটিকে বহনকারী এডিস মশাগুলিকে নতুন অঞ্চলে ঠেলে দিচ্ছে । এটি পরিবেশগত পরিবর্তন এবং চিকুনগুনিয়ার পুনরায় আবির্ভাব ও সম্ভাব্য ভৌগোলিক বিস্তারের মধ্যে একটি সরাসরি কার্যকারণ সংযোগ স্থাপন করে। এটি বাংলাদেশে ভেক্টর-বাহিত রোগের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে একটি “হুমকি গুণক” হিসাবে বিস্তৃত ধারণাকে শক্তিশালী করে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সংক্রামক রোগ
কলেরা: বর্তমান অবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা
কলেরা বাংলাদেশে একটি স্থানীয় রোগ হিসাবে রয়ে গেছে। এটি নিয়মিতভাবে প্রাদুর্ভাব এবং মহামারী ঘটাতে সক্ষম, বিশেষ করে দুর্বল স্যানিটেশন এবং দূষিত জলের উৎসযুক্ত অঞ্চলে । ২০২৪ সালের ২৩ জুন থেকে শুরু হওয়া কলেরার প্রাদুর্ভাবটি ২০২৫ সালেও অব্যাহত ছিল। এটি ৩২ সপ্তাহ ধরে চলেছিল এবং গত ৫ বছরের মধ্যে দীর্ঘতম বৃদ্ধি ছিল। মোট ৫৮১টি কালচার-নিশ্চিত কেস রিপোর্ট করা হয়েছিল । এটি এই রোগের দ্বারা সৃষ্ট স্থায়ী চ্যালেঞ্জকে তুলে ধরে।
তবে, উৎসাহজনকভাবে, এই নির্দিষ্ট প্রাদুর্ভাবটি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত টানা চার সপ্তাহ ধরে কোনো নতুন কলেরার ঘটনা রেকর্ড করা হয়নি ।
বিশ্বব্যাপী, কলেরা একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য হুমকি হিসাবে রয়ে গেছে । এটি ৪৭টি দেশকে প্রভাবিত করে এবং প্রতি বছর আনুমানিক ২.৯ মিলিয়ন কেস ও ৯৫,০০০ মৃত্যুর কারণ হয় । দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনটি দেশে ২৫৯টি নতুন কলেরা/তীব্র জলীয় ডায়রিয়া (AWD) কেস দেখা গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ১২টি কেস বিশেষভাবে রিপোর্ট করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৭৯টি কেস রেকর্ড করা হয়েছে ।
বাংলাদেশের একটি কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ কাঠামো রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য জাতীয় কলেরা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা (NCCP) (২০১৯-২০৩০) ২০৩০ সালের মধ্যে ৯০% মৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্য রাখে। এই পরিকল্পনায় একটি বহু-ক্ষেত্রীয় পদ্ধতির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ওরাল কলেরা ভ্যাকসিন (OCV) ব্যবহার এবং উন্নত জল, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (WASH) অনুশীলন বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত ।
এছাড়াও, বন্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কলেরার প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি বাড়ায়। কারণ শৌচাগার এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার প্লাবন পানীয় জলের উৎসগুলির ব্যাপক দূষণের কারণ হয় ।
বার্ড ফ্লু (H5N1): সাম্প্রতিক মানব সংক্রমণ ও জুনোটিক ঝুঁকি
বাংলাদেশ সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কে দুটি নতুন মানব H5N1 এভিয়ান ফ্লু সংক্রমণের বিষয়ে অবহিত করেছে । এটি ২০১৫ সালের পর থেকে দেশের প্রথম নিশ্চিত মানব কেস ।
ফলস্বরূপ, এটি জুনোটিক ঝুঁকির পুনরায় আবির্ভাবের ইঙ্গিত দেয়। উভয় রোগীই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের খুলনা বিভাগের অল্পবয়সী ছেলে ছিলেন। উভয়ই সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ।
একটি কেস ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে সংগৃহীত একটি নমুনা থেকে সনাক্ত করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, যে জেলায় শিশুটি বাস করে সেখানে হাঁস-মুরগিতে H5N1 প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়ার পর এটি ঘটে। এটি প্রাণী হোস্ট থেকে সংক্রমণের একটি স্পষ্ট সংযোগ নির্দেশ করে। এছাড়াও, অন্য কেসটি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংগৃহীত একটি নমুনা থেকে পূর্ববর্তীভাবে সনাক্ত করা হয়েছিল ।
শনাক্তকৃত ভাইরাসটি একটি পুরনো স্থানীয় H5N1 ক্ল্যাড (2.3.2.1a)। এটি বিশ্বব্যাপী 2.3.4.4b ক্ল্যাডের সাম্প্রতিক প্রবর্তনের পরেও বাংলাদেশ এবং ভারতের পাখি ও হাঁস-মুরগিতে ক্রমাগতভাবে ছড়িয়ে পড়ছে । এটি স্থানীয় স্ট্রেনগুলির স্থায়িত্ব এবং প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণের চলমান ঝুঁকি তুলে ধরে।
সুতরাং, এই কেসগুলি “ওয়ান হেলথ” পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বকে তুলে ধরে। এটি রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে মানব, প্রাণী এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যের অন্তর্নিহিত আন্তঃসংযোগকে স্বীকৃতি দেয় ।
কলেরার মতো স্থানীয় রোগগুলির ক্রমাগত উপস্থিতি এবং মাঝে মাঝে বৃদ্ধি , পাশাপাশি দীর্ঘ বিরতির পর মানব H5N1 এভিয়ান ফ্লু মামলার পুনরায় আবির্ভাব , এমনকি যখন “নিয়ন্ত্রিত” থাকে, তখন এটি নির্দেশ করে যে কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ স্থানীয় সংক্রামক রোগগুলির একটি স্থায়ী ও প্রায়শই অবমূল্যায়িত বোঝা বহন করে। বিশেষ করে, এভিয়ান ফ্লুর মতো জুনোটিক রোগগুলি প্রাণী হোস্ট থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণের ক্রমাগত ঝুঁকি এবং মানব-প্রাণী-পরিবেশ ইন্টারফেসে সক্রিয় নজরদারি ও প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্ব তুলে ধরে।
হাম: বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও স্থানীয় প্রভাব
বিশ্বব্যাপী হামের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে । ২০২৫ সালের ১২ জুন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১,১৯৭টি নিশ্চিত কেস এবং ২১টি প্রাদুর্ভাব রিপোর্ট করা হয়েছে। এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি নির্দেশ করে ।
যেমন, ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে হামের প্রাদুর্ভাবের শীর্ষ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে ইয়েমেন, ভারত, পাকিস্তান, কিরগিজস্তান এবং আফগানিস্তান । এই তালিকায় ভারত এবং আফগানিস্তানের উপস্থিতি আঞ্চলিক বিস্তার এবং বাংলাদেশে আন্তঃসীমান্ত সংক্রমণের সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।
তবে, যদিও ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জন্য নির্দিষ্ট বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা হয়নি, ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক কার্যকলাপ এবং উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক প্রাদুর্ভাবগুলি বাংলাদেশে শক্তিশালী ও টেকসই হাম টিকাদান কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা দৃঢ়ভাবে নির্দেশ করে । এটি মোকাবেলার একটি নির্দিষ্ট প্রচেষ্টায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কক্সবাজার অফিস ২০২৫ সালের মে মাসে রোহিঙ্গা শিবিরগুলিতে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ৭,০৮৪ ডোজ হাম-রুবেলা (MR) ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে । এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলিতে চলমান টিকাদান প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে।
সুতরাং, H5N1 ভ্যারিয়েন্টের বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় স্থানেই ছড়িয়ে পড়ার উল্লেখ, এবং ভারত ও অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির শীর্ষ হাম প্রাদুর্ভাব দেশগুলির মধ্যে উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা আঞ্চলিক রোগের গতিবিদ্যার সাথে অভ্যন্তরীণভাবে সংযুক্ত। এটি শক্তিশালী সীমান্ত নজরদারি, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সহযোগিতা এবং সমন্বিত আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বকে তুলে ধরে। কারণ রোগগুলি সহজেই সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে এবং দেশে প্যাথোজেন বা নতুন ভ্যারিয়েন্ট পুনরায় প্রবেশ করাতে পারে।
ব্যাপক জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ ও কাঠামোগত দুর্বলতা
বৈদেশিক তহবিল কর্তনের প্রভাব (যেমন, ইউএসএআইডি)
Urgent needs grow as aid projects shut down in Bangladesh বাংলাদেশের উপর গভীর ও গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি তহবিল বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পর ১০০টিরও বেশি উন্নয়ন প্রকল্প, যার আনুমানিক মূল্য $৫৫০ মিলিয়ন, স্থগিত করা হয়েছে ।
ফলস্বরূপ, এই কাটছাঁটগুলি সংক্রামক রোগ ট্র্যাকিং এবং জরুরি প্রতিক্রিয়া সহায়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলিকে সরাসরি প্রভাবিত করেছে। এই প্রকল্পগুলি এখন স্থগিত করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুম চলমান থাকায় এই সহায়তার বন্ধ হওয়া নতুন প্রাদুর্ভাবগুলিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে ।
এছাড়াও, প্রভাব মানবসম্পদ পর্যন্ত বিস্তৃত। ১,০০০ জনেরও বেশি জনস্বাস্থ্য পেশাদার সহ প্রায় ২০,০০০ লোক এনজিও এবং স্থানীয় সংস্থাগুলিতে তাদের চাকরি হারিয়েছে । এই পেশাদাররা ক্লিনিক পরিচালনা, শিক্ষা কর্মসূচী বিতরণ এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের দুর্বল পরিবারগুলিকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ।
এর ফলে, জল এবং স্যানিটেশনের মতো অপরিহার্য পরিষেবাগুলিও প্রভাবিত হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে, যেখানে জলের সরবরাহ প্রায়শই লবণ দ্বারা দূষিত হয়, সেখানে পানীয় জল নিরাপদ করার প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি বিশেষ করে বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের সময় সম্প্রদায়গুলির জল সংকট এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখোমুখি হওয়ার প্রবণতা বাড়ায় ।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দের অনুপযুক্ততা এবং পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও প্রযুক্তির অভাব দ্বারা চিহ্নিত । উপযুক্ত স্বাস্থ্য নীতি, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের অভাবে সরকার কার্যকর স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহ করতে পারছে না ।
ফলস্বরূপ, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা জনগণকে সঠিক চিকিৎসা সেবা দিতে অক্ষম। এটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য বেশ কয়েকটি সমস্যা তৈরি করে ।
এছাড়াও, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রতিশ্রুতির অভাব স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পগুলির কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতার অভাব স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার গুণগত মানকে প্রভাবিত করে । গ্রামীণ অঞ্চলে চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসা সীমিত। বেশিরভাগ চিকিৎসক শহুরে এলাকায় বাস করেন ।
সংক্রামক রোগের পাশাপাশি, বাংলাদেশ অসংক্রামক রোগের (NCDs) দ্বৈত বোঝার সম্মুখীন। এটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে ।
সুতরাং, এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় একটি “ওয়ান হেলথ” কৌশলগত কাঠামো গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানব, প্রাণী এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যের আন্তঃসংযোগকে স্বীকৃতি দেয়। এটি সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে একটি বহু-ক্ষেত্রীয় সমন্বিত পদ্ধতির উপর জোর দেয় ।
জলবায়ু পরিবর্তন: সংক্রামক রোগের হুমকি গুণক
জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ “হুমকি গুণক” হিসাবে কাজ করে । এটি তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভেক্টর-বাহিত রোগের বিস্তারকে প্রভাবিত করে ।
ফলস্বরূপ, এটি মশার আবাসস্থল এবং আচরণ পরিবর্তন করে। এর ফলে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার মতো রোগগুলি এমন অঞ্চলে পুনরায় আবির্ভূত হয় বা বৃদ্ধি পায় যেখানে ঐতিহাসিকভাবে তাদের উপস্থিতি কম ছিল ।
এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টিকেও বাড়িয়ে তোলে। এটি বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ায় । বন্যা এবং ঝড় অবকাঠামোর ক্ষতি করে। এটি সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত করে। দূরবর্তী, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত বা প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলিতে অপরিহার্য পরিষেবা সরবরাহ করা কঠিন করে তোলে। এটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে ।
ডেটা ঘাটতি এবং নজরদারির অভাব
কোভিড-১৯ এর জন্য কম পরীক্ষা, চিকুনগুনিয়ার জন্য জাতীয় নজরদারি ব্যবস্থার অভাব এবং অসম্পূর্ণ মৃত্যু নিবন্ধন (কবরস্থান-ভিত্তিক ডেটা) সহ বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ডেটা ঘাটতি একটি পুনরাবৃত্ত সমস্যা ।
ফলস্বরূপ, এই ডেটা ঘাটতি সংক্রমণের প্রকৃত ব্যাপ্তিকে অস্পষ্ট করে। এটি কার্যকর জনস্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং সম্পদের ভুল বরাদ্দ ঘটায়। ডিজিটাল ডেটা সংগ্রহ ব্যবস্থার মতো উদ্ভাবনী সমাধানগুলি এই ব্যবধান পূরণে সাহায্য করতে পারে ।
জনসচেতনতা ও আচরণগত কারণ
কোভিড-১৯ এর প্রতি জনসাধারণের উদাসীনতা এবং ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু সম্পর্কে কম সচেতনতা রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে একটি বড় বাধা।
এর ফলে, যখন সংক্রমণের হার কমে যায় তখন জনসচেতনতা এবং স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলার প্রবণতা শিথিল হয়ে যায়। এটি অজান্তেই নতুন ঢেউয়ের উত্থানে অবদান রাখতে পারে । কার্যকর ঝুঁকি যোগাযোগ এবং সম্প্রদায়কে জড়িত করার কৌশলগুলি এই আচরণগত কারণগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য অপরিহার্য।
উপসংহার ও সুপারিশমালা
বাংলাদেশে বর্তমানে একটি জটিল এবং আন্তঃসংযুক্ত জনস্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি। এটি একাধিক সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব এবং অন্তর্নিহিত কাঠামোগত দুর্বলতা দ্বারা চালিত। বিশেষ করে, কোভিড-১৯ এর নতুন ঢেউ, ডেঙ্গুর অভূতপূর্ব ভৌগোলিক বিস্তার এবং চিকুনগুনিয়ার পুনরায় আবির্ভাব দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। তাছাড়া, এই চ্যালেঞ্জগুলি সীমিত পরীক্ষা, ডেটা ঘাটতি, জনস্বাস্থ্য নির্দেশিকাগুলির প্রতি জনসাধারণের উদাসীনতা, এবং বৈদেশিক তহবিলের কাটছাঁটের মতো পদ্ধতিগত দুর্বলতা দ্বারা আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
উপরন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন এই পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এই পরিবর্তন ভেক্টর-বাহিত রোগের বিস্তার এবং তীব্রতাকে প্রভাবিত করছে। সুতরাং, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটি সমন্বিত এবং বহু-ক্ষেত্রীয় পদ্ধতির প্রয়োজন। এই পদ্ধতি “ওয়ান হেলথ” ধারণার উপর ভিত্তি করে মানব, প্রাণী এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যের আন্তঃসংযোগকে স্বীকৃতি দেয়। ফলস্বরূপ, কোভিড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বাংলাদেশ-এর এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি।
এই জটিল জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিম্নলিখিত সুপারিশগুলি বিবেচনা করা যেতে পারে:
আঞ্চলিক সহযোগিতা: প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে রোগ নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্তিশালী আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে।
নজরদারি ও ডেটা ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ: সমস্ত সংক্রামক রোগের জন্য একটি শক্তিশালী, সমন্বিত এবং রিয়েল-টাইম নজরদারি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য। কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিটের ঘাটতি অবিলম্বে পূরণ করতে হবে এবং ডেটা যাচাইকরণ প্রক্রিয়া উন্নত করতে হবে। কবরস্থান-ভিত্তিক ডেটা সংগ্রহের মতো উদ্ভাবনী পদ্ধতিগুলি ডেটা ঘাটতি পূরণে এবং প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় সহায়তা করতে পারে ।
টিকাদান কর্মসূচীর পুনরুজ্জীবন: কোভিড-১৯ এর জন্য একটি সক্রিয় এবং ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচী পুনরায় চালু করতে হবে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলির জন্য বুস্টার ডোজ নিশ্চিত করতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে চলা ভ্যাকসিনের মজুদ কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। হামের মতো নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচীগুলির উচ্চ কভারেজ বজায় রাখতে হবে।
উন্নত ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ: ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার মতো মশা-বাহিত রোগের জন্য সারাদেশে একটি ব্যাপক এবং ন্যায়সঙ্গত মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হবে, যা কেবল ঢাকা-কেন্দ্রিক না হয়ে গ্রামীণ ও আধা-শহুরে অঞ্চলগুলিতেও সমানভাবে মনোযোগ দেবে। আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জনসচেতনতা অভিযান জোরদার করতে হবে।
জলবায়ু-সহনশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: জনস্বাস্থ্য কৌশলগুলিতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনকে একীভূত করতে হবে, যা ভেক্টর-বাহিত রোগের উপর এর প্রভাব প্রশমিত করার এবং চরম আবহাওয়ার বিরুদ্ধে অবকাঠামো শক্তিশালী করার উপর মনোযোগ দেবে।
টেকসই তহবিল নিশ্চিতকরণ: বৈদেশিক তহবিলের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে এবং জনস্বাস্থ্য কর্মসূচীগুলির জন্য অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ইউএসএআইডি-এর মতো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ তহবিল উৎস অনুসন্ধান করতে হবে যাতে অপরিহার্য জনস্বাস্থ্য কর্মসূচী এবং কর্মীবাহিনীকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করা যায়।
সম্প্রদায়কে জড়িত করা ও বিশ্বাস স্থাপন: জনসাধারণের উদাসীনতা মোকাবেলায় এবং বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য লক্ষ্যযুক্ত ঝুঁকি যোগাযোগ কৌশল তৈরি করতে হবে, যা ভাগ করা দায়িত্বের উপর জোর দেবে।
স্তরযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন: প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করতে হবে এবং রোগীর চাপ কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য ডায়াগনস্টিক ও মাধ্যমিক যত্নের ক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায় ।